বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা তিন ভাগ মানুষের বুদ্ধির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং প্রতি দশটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই সমন্যার দ্বারা আক্রান্ত। দেশের দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও মহামারীর ব্যাপকতা হিসেবের মধ্যে রাখলে বাংলাদেশের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের সংখ্যা যে আরও বেশী হবে এটা নিশ্চিত। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা গড়মানের চেয়ে কম হয়ে থাকে। একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর বুদ্ধির বিকাশ সাধারণত ধীরগতি সম্পন্ন হয়। বিকাশের অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা গিছিয়ে থাকে যেমনঃ বসা,দাড়ানো, হাটা, ও কথা বলা প্রভৃতি এবং এই অবস্থা শৈশবকালে অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সের পূর্বে ঘটে থাকে।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা হল সেই ধরণের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রতিবন্ধিতা যেখানে বুদ্ধিদীণ্ড কার্যাবলী এবং উপযোজনমূলক আচরণে তাৎপর্যপূর্ণ সীমাবদ্ধতা থাকে যা ধারণাগত, সামাজিক এবং উগযোজনমুলক দক্ষতার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা ১৮ বছর বয়সের মধ্যে উৎপত্তি হয়।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের বুদ্ধির সীমীবন্ধতা থাকা সত্তেও এদের বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের বিদ্যমান বুদ্ধির সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব এবং এদের উপার্জন সক্ষম করা সম্ভব৷ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতা সারিয়ে তোলার যাদুকরি কোন চিকিৎসা নেই। এদের পরিবারের শ্রম, যত, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আর বিশেষজ্ঞ সহায়ক দলের পরামর্শ এই শিশুদের স্বনির্ভর জীবন যাপনে সক্ষম করে তুলতে পারে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্বনির্ভর ও কর্মক্ষম করার জন্য বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে পরিবারের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন শিশুকে স্বনির্ভর ও কর্মক্ষম করতে অনেক বেশি সময় লাগে। বিশেষ শিক্ষা বাবস্থার পাশাপাশি যদি মুলধারায় শিক্ষাব্যবস্থায় শ্রেনীকক্ষে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের কিছুটা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে তাদের জীবন ধারা সম্ভাব্য সর্বাধিক স্বাভাবিক উপায়ে পরিচালিত হবে এবং তারা সমাজের মুলধারায় মিশে যেতে পারবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কোন শিশুর জন্মের মুহুর্তে শিশুটি সুস্থ না প্রতিবন্ধী হবে সে সম্পর্কে কোন ভবিষ্যৎবানী করা সম্ভব না। যদি শিশুর জন্মের পর তার আচরণ পর্যবেক্ষণের পর তার প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা যায় তখন শিশুটির পরিবারের প্রথম কাজ হলো শিশুটিকে প্রশিক্ষণ এবং সহানুভূতির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুটির অবস্থার উন্নতি ঘটানো।