ADHD এর লক্ষণ নয়তো?
বেশীর ভাগ অতিরিক্ত দুষ্টু, চঞ্চল বাচ্চাদের অভিভাবকরা মানতে চান না এই অতিচঞ্চলতা বা হাইপার এক্টিভিটি আসলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক না। শিশুর মানসিক বিকাশগত সমস্যা যা Attention Deficit Hyperactivity Disorder (ADHD) নামের আচরণগত সমস্যার একটি লক্ষণ। অনেকসময় স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে মনে করায় এটা নির্ণয় করতে অনেক দেরী হয়ে যায় ও চিকিৎসা করে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে।
ADHD কি? কেন হয়?
এটা শিশুর মানসিক বিকাশগত সমস্যা যার কারন নির্দিষ্ট নয়। ধরে নেয়া হয় এটা জীনগত ও পরিবেশের প্রভাবও বিদ্যমান। বাবা মায়ের যে কারো ADHD থেকে থাকলে বাচ্চার বেলায় ৫০% চান্স আছে এটা হওয়ার। সাধারণত মেয়েদের চেয়ে ছেলে বাচ্চাদের বেশী হয় (৪ঃ১)। এছাড়া মস্তিষ্কের রোগ, থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য, গর্ভকালীন মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা, বিষাক্ত ক্যামিকেল, কীটনাশক, লোহা ও সীসার সংস্পর্শে আসা, অপুষ্ট ও সময়ের আগে বাচ্চা হলেও পরবর্তীতে এডিএইচডি হতে পারে।
সাধারনত, বাচ্চার চঞ্চলতাকে বয়সের সাথে স্বভাবিক ধরে নেয়ায় সমস্যা নির্ণয় করতে অনেকসময় দেরী হয়ে যায়। ৭- ১২ বছর বয়সের আগে বেশীরভাগ বাবা মাই বুঝতে পারে না, সময়ে ঠিক হয়ে যাবে মনে করে নেন।
কি দেখে বুঝবেন বাচ্চার ADHD আছে?
ADHD এর তিনটা ধরন হয়ে থাকে।
১. অমনোযোগীতা
২.অতিরিক্ত চঞ্চলতা ও অযাচিত আচরণ
৩.উপরের দুটোই একসাথে হওয়া যা বেশীর ভাগ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
লক্ষণ সমূহঃ
১. নিজের মনমতো কাজ করা ও নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়া।
২. কোন কাজ সুশৃঙ্খল ভাবে না করা ও শেষ পর্যন্ত লেগে না থাকা। দ্রুত মনযোগ সরে যাওয়া।
৩. হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, জিদ করা বা বিষন্ন হয়ে যাওয়া কারণ ছাড়াই।
৪. এক জায়গায় স্হির হয়ে না বসা, সারাক্ষণই ছুটোছুটি করা।
৫. চুপচাপ কোন কাজ না করা, অযথাই চিৎকার করা, অপ্রয়োজনে ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা। অন্যের কথা মাঝে কথা বলা ও তাদের কথায় কান না দেয়া।
৬. যেভাবে করতে বলা হয় তা মেনে না নেয়া, গুছিয়ে কোন কাজ না করতে পারা, প্রায়ই কাজে ভুল করা যেমন, হোমওয়ার্ক না করা, জিনিসপত্র হারানো।
৭. কথা মনযোগ দিয়ে না শোনা, উদাস হয়ে যাওয়া, অবাস্তব কল্পনা করা, অন্যদের এড়িয়ে চলা বা মিশতে না পারা, হঠাৎ মারামুখি হওয়া।
অটিজম আর ADHD কি একই সমস্যা?
না, দুটো একই রকম না। অটিজমে অমনোযোগীতা, সঙ্গবিমুখ হওয়া, কমান্ড ফলো না করার মত কিছু লক্ষণ আছে ADHD এর মত, তবে তা অটিজমের অংশ নয়।
সমস্যা নির্ণয়ের উপায়ঃ
মাত্রারিক্ত ও ধ্বংসাত্মক চঞ্চলতাকে অবহেলা বা প্রশয় না দিয়ে তার মধ্যে এর কোন লক্ষণ দেখা গেলে নিকটস্থ শিশু বিকাশ কেন্দ্র বা নিউরোলজির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ , ল্যাবরেটরী পরীক্ষা ও বিকাশের ধাপগুলো যাচাই করেই কনফার্ম বলা হবে, অযথা নয়।
চিকিৎসা না করালে কি ক্ষতি?
বয়সের সাথে সাথে বড় হলে বাচ্চা ঠিক হয়ে যাবে এমন আশা করে লাভ নাই। কারন, ৩০%-৭০% ক্ষেত্রে এ সমস্যা বড় বেলাতে দেখা যায়। সময় মতো চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। এরা পরিবারে, সমাজে, কার্যক্ষেত্রে কোথাও খাপ খাওয়াতে পারেনা।
চিকিৎসাঃ
অতিরিক্ত চঞ্চলতা কমানোর জন্য ঔষধ দেয়ার আগে কিছু উপায় আছে যা পালনে এ রোগ আস্তে আস্তে ভালোও হয়ে যেতে পারে। যেমন,
১. বাচ্চার এনার্জিকে ভালো কাজে লাগানো, যেমন, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং করা, ক্যারাটে বা মার্শাল আর্ট শেখানো।
২. সহজ ভাষায় বাচ্চাকে বুঝাতে হবে, অল্প কথায় কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। তার মেজাজের সাথে কাপ খাইয়ে সহানুভূতির সাথে তাকে শেখাতে হবে।
৩. ছোট ছোট কাজের লিস্ট দিতে হবে যাতে সে অল্প সময়ে মনে করে সব কাজ করতে পারে এবং সময় বেঁধে দিতে হবে।
৪, লিস্টের কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারলে তাকে প্রশংসা করা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা লাগবে।
৫. ঘরে টিভি, ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে বাইরে খোলা মাঠে সবুজ প্রকৃতিতে লেখতে সিতে হবে।
৬.হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে গেলে মনযোগ সরিয়ে নেয়া, জোরে জোরে শ্বাস নিতে বলা এবং সহানুভূতির সাথে তার সাথে কথা বলতে হবে।
৭. স্কুলে টিচার, অভিভাবকদের সাথে সমন্নয় থাকতে হবে যেন ক্লাশে ওর দিকে মনযোগ দেয়া হয়, ওকে পড়া তৈরী করতে সাহায্য করা, প্রশংসা করা, কোন কাজ ঠিক মতো করতে পারলে তাকে পুরস্কিত করা সবই স্কুল ও বাবামায়ের দায়িত্ব নিয়ে পালন করতে হবে।
৮. শান্ত করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে গান শুনতে দেয়া বিশ্রামে রাখা ও তার সাথে সহজ ভাষায় গল্পকরে তার মনযোগ ধরে রাখতে হবে।
আমাদের দেশে কি চিকিৎসা আছে?
নিশ্চয়ই আছে। প্রতিটা মেডিকেল কলেজেই চাইল্ড নিউরোলজিস্ট বসেন, শিশু বিকাশ কেন্দ্র ( CDC) তে এ রোগের কাউন্সেলিং ও থেরাপি দেয়া হয়।
খাবারের সাথে ADHD এর সম্পর্কঃ
সাধারণত গম, ভুট্টা, চকলেট, টমেটো, আঙ্গুর, সিম জাতীয় খাবার দিতে মানা করা হয়। চিনি বা কোন এলার্জিক খাবারের সাথে ADHD বাড়ার কোন সম্পর্ক নাই। তবে মায়ের কাছে যদি মনে হয় কোন খাবারে বাচ্চার চঞ্চলতা বেড়ে যায় তাহলে সে খাবার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে সেটা এলার্জি নাকি অতিচঞ্চলতা।
অনেক গবেষনায় বলা হয় যে, ভিটামিন বি, সি, ডি-থ্রি, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড,ম্যাগনেসিশান জাতীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ এডিএইচডি কমাতে সহায়তা করে।
উপসংহারে বলবো, মাত্রারিক্ত ধ্বংসাত্মক চঞ্চলতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে একটু সচেতন হলেই কিন্তু বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। শিশুর ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত থাকবে।